মঈন ইউ আহমদ ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অতি বিশ্বস্ত। তাকে দীর্ঘ দিন থেকে ‘র’ নার্সিং করছিল। তাঁর নিজের লেখা বই-এ উল্লেখ করেছেন তখন তিনি সবে মাত্র ক্যাপ্টেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের সঙ্গে সেনা অভ্যুত্থানের লক্ষ্যে বঙ্গভবন আক্রমণ করেন। বঙ্গবভনে তাঁর দায়িত্ব ছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদকে বন্দী করা। তাঁর নেতৃত্বে খন্দকার মোশতাক বন্দী হন। খন্দকার মোশতাককে একটি রুমে ৩ দিন আটক রাখা হয়েছিল মঈন ইউ আহমদের নেতৃত্বে।

৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার সম্মিলিত বিপ্লবে পরাজিত হন খালেদ মোশাররফ। তখন বঙ্গভবন থেকে দেয়াল টপকে বের হয়ে বিপ্লবী জনতার কাতারে মিশে যান মঈন ইউ আহমদ। এসব কাহিনী তিনি নিজে লিখেছেন মঈন ইউ আহমদ তার বইয়ে। মঈন ইউ আহমদ তখন থেকেই ভারতীয় কব্জায়। কারন তখন খালেদ মোশাররফ ভারতের সহযোগিতায় ক্যু করেছিলেন। সেটা আঁচ করতে পেরেই সিপাহী জনতা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করেছিল সেই ক্যু। সম্মিলিত বিপ্লবের কাছে পরাজিত হয়েছিল খালেদ মোশাররফ।

দুই,

চার দলীয় জোট সরকারের সময় ‘র’-এর অপারেশন সফল হয় মঈন ইউ আহমদ সেনা প্রধান নিয়োগ হওয়ার মাধ্যমে। এই নিয়োগের পর থেকেই জাতীয় সেনাবাহিনী ভারতের প্রতি পুরো ঝুঁকে পড়ে। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজি এফ আই-এর সহায়তায় ‘র’-এর জন্য পৃথক অফিস খোলা হয় তখনই। ‘র’-এর কৌশলি পরিকল্পনায়ই তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের মাধ্যমে র‍্যাবকে ব্যবহার করে ক্রস ফায়ারের নামে দেশ প্রেমিকদের হত্যা শুরু হয়। এই এনকাউন্টার পদ্ধতি ভারতেই প্রচলিত রয়েছে।

বিশেষ করে ইন্ডিয়া বিরোধী দেশ প্রেমিক বামপন্থি তাত্ত্বিক নেতা কামরুল মাস্টার, মোফাখখার চৌধুরীসহ অনেককে হত্যা করা হয় ক্রস ফায়ারের নামে। শেখ মহিউদ্দিন আহমদকেও লূতফুজ্জামান বাবর ক্রসফায়ারে পাঠায় তার ভারত বিরোধীতার জন্য। কিন্তু কয়েকজন জেনারেল সে পরিকল্পনা ভন্ডুল করে দেয়। তবে তার কয়েক ডজন কর্মীকে হত্যা করে বাবর। সর্বহারা দমনের নামে ইন্ডিয়া বিরোধী বাম পন্থিদের টার্গেট করে হত্যা মিশন চলতে থাকে তখন। চার দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকা কালীন বিএনপির অনেক পরিক্ষীত যুব নেতাদের ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করা হয়। কারন তারাই ছিল বিএনপি’র রাজপথ দখলের অন্যতম শক্তি। বিএনপি যাতে পরবর্তিতে রাজপথে দাড়াতে না পারে সেই ষড়যন্ত্রেই মূলত ক্রসফায়ারের নামে এসব হত্যাকান্ড চালানো হয়। সন্ত্রাস দমনের তাবিজ দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে তখন রাজি করানো হয় ক্রসফায়ারে সম্মত করা হয়।

ডিজিএফআই-এ তখন কৌশলে নিয়োগ দেয়া হয় জামায়াতে ইসলামীর পরিবারের সদস্য হিসাবে পরিচিত ‘র’-এর বিশ্বস্ত এজেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনকে। আমিন তখন সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডি জি এফ আই-এর গুরুত্বপূর্ন কাউন্টার ইন্টিলিজেন্স এর ডাইরেক্টর পদে নিয়োগ পান। আমিনও ছিলেন ‘র’-এর নার্সিং-এ সরাসরি নিয়োগ প্রাপ্ত। বাহ্যিক দৃস্টিতে ব্রিগেডিয়ার আমিনকে জামায়াতে ইসলামী পরিবারের সদস্য এবং আলেমের ছেলে হিসাবে দেশপ্রেমিক ভাবতেন অনেকে। এমনকি জামায়াতও। কিন্তু আমিন ছিলেন মঈন ইউ আহমদের চেয়েও ভয়ানক ভারতপন্থি। ইসলামী মূল্যবোধ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে ধ্বংসই ছিল তাঁর মূল এজেন্ডা। তাঁর এই মনোভাব বুঝতে পেরে দেশপ্রেমিক অনেক অফিসারের পক্ষ থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু সেই আপত্তিতে বাধা দিতেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। তারা বলতেন আমিন তাদের পরিবারের সদস্য। কোন সমস্যা নেই।

বেগম খালেদা জিয়ার আরেক বিশ্বস্ত লে. কর্ণেল পদ থেকে চৌধুরী ফজলুল বারীকে রাতারাতি প্রমোশন দিয়ে বিগ্রেডিয়ার পদে উন্নীত করে নিয়োগ দেয়া হয় ডিজিএফআই-এর ডাইরেক্টর অপারেশন হিসাবে। এই পদে নিয়োগ দিতেই তাঁকে দেয়া হয় ডাবল প্রমোশন। ডিজিএফআই-এর ডাইরেক্টর অপারেশনের পদটিকে বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর পর দ্বিতীয় পাওয়ারফুল চেয়ার। র‍্যাব-এ থাকাকালীন জাতীয়তাবাদী এবং দেশপ্রেমিক অনেক নেতাকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যাকান্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই চৌধুরী ফজলুল বারী। এছাড়া সাঈদ ইস্কান্দরের ভায়রা হিসাবে সূপরিচিত মাসুদ উদ্দীন চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয় সাভারের ৯ম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসাবে। মাসুদ চৌধুরী রক্ষীবাহিনীর সদস্য হলেও সে ছিল যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নার্সিং পাওয়া অফিসার। মঈন, আমিন, বারী সকলেই ছিলেন সেনা বাহিনীতে ‘র’-এর এজেন্ট। ‘র’ কৌশলে তাদের বিশ্বস্ত এজেন্টদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়ে শুরু করে দ্বিতীয় রাউন্ড। তাদের মাধ্যমে ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারী (১/১১) ‘র’ রাষ্ট্র ক্ষমতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

‘র’-এর তখন দ্বিতীয় রাউন্ড ছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা তাদের পুরো নিয়ন্ত্রণে নেয়া। এই দ্বিতীয় খেলায় সফল হতে ব্যবহার করা হয় ইন্ডিয়াপন্থি পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেল। চার দলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে কাল্পনিক দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশ করা হতো তখন। মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছাড়ানোর লক্ষ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের গল্প প্রচার করা হতো ইন্ডিয়াপন্থি পত্রিকা গুলোতে। বিশেষ করে ইন্ডিয়াপন্থি প্রথম আলো এবং ডেইলিস্টার-এর মিশন ছিল মঈন ইউ আহমদকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসা। তাই ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, চ্যানেল আই এবং সিপিডি’র তত্ত্বাবধানে তখন যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন নামে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারা বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে যোগ্যপ্রার্থী আন্দোলনের নামে সভা সেমিনার করতেন এবং রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মানুষকে উস্কে দিতেন। ১/১১-এর মিশন সফল হওয়ার পর থেমে যায় তাদের যোগ্যপ্রার্থী আন্দোলনের নামে কর্মসূচি।—————————————-(চলবে)