মানসিক প্রস্তুতি ছিল। রায় ঘোষণার আগেই গুছিয়ে নিয়েছিলেন সব। গৃহকর্মী ফাতেমাকেও বলেছিলেন, সেমতে প্রস্তুত হতে। কয়েকমাস থাকতে হতে পারে। ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির আইনজীবীদের একটি দল।পরামর্শ দিচ্ছেন বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই এমন কয়েকজন আইনজীবীও। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কথিত ভুল নিয়ে এরই মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু আলোচনা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও একবার বলেছিলেন, আইনজীবীদের ভুলের কারণেই খালেদা জিয়া কারাগারে। কী ভুল তা অবশ্য তিনি খোলাসা করেননি। যদিও নিজেদের কোনো ভুল মানতে রাজি নন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা।
সে যাই হোক, গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার ‘বিস্ময়ের’ মুখোমুখি হয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। প্রথমবার তারা বিস্মিত হন যখন হাইকোর্ট জানায়, নথি দেখে জামিন আবেদনের ব্যাপারে আদেশ দেয়া হবে। এ ধরনের আদেশের জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না। সিনিয়র আইনজীবীরা এ আদেশকে বলেছেন, নজিরবিহীন। পরে অবশ্য হাইকোর্ট জামিন দিলে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে। দলটির আইনজীবীদের কেউ কেউ আশা করেছিলেন, হাইকোর্ট জামিন আবেদন মঞ্জুর করার পর শিগগিরই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। কিন্তু দ্রুতই তাদের সে আশা ভাঙে। যখন জামিন মঞ্জুরের দিনই কুমিল্লার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তবে তাদের জন্য
আরো বিস্ময় অপেক্ষা করেছিল। যখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে দেন তখন আক্ষরিক অর্থেই হতবাক হয়ে পড়েন তার আইনজীবীরা। শুনানির সুযোগ না পাওয়ায় এজলাস কক্ষেই তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এখন খালেদা জিয়ার জন্য কী অপেক্ষা করছে? জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও সরকারের লিভ টু আপিলের ওপর আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে রোববার। এ মামলায় আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত দেয় তার ওপর নির্ভর করছে বহু কিছু। তবে এ মামলায় জামিন বহাল থাকলেও সহসাই তার কারামুক্তি ঘটছে না। কারণ, কুমিল্লার সহিংসতার মামলায় তাকে জামিন পেতে হবে। ২৮শে মার্চ কুমিল্লার আদালতে ওই মামলার শুনানির কথা রয়েছে। এ ছাড়া, আরো অন্তত পাঁচটি মামলা রয়েছে যেসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কারাগারে খালেদা জিয়ার পথ বেশ দীর্ঘ।
দুই ডজনের মতো বেশি মামলা দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে খালেদা জিয়াকে। তার দল অবশ্য এখন এগুচ্ছে ধীরে সুস্থে। কারাগারে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া দলকে কড়া নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন যে, কোনো ধরনের হটকারিতায় জড়ানো যাবে না। সহিংস বা কঠোর কোনো কর্মসূচিও দেয়া যাবে না। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে যতটা সম্ভব এগুনোর চেষ্টা করতে হবে। বিএনপি অবশ্য নেতার এ নির্দেশ পালন করেছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে তারা কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যায়নি। উসকানি সত্ত্বেও পরিচয় দিচ্ছে ধৈর্যের। তবে দলটির মধ্যে নানা বিষয়ে অস্বস্তি এবং আতঙ্কও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা হেফাজতে ছাত্রদল নেতা জাকিরের মৃত্যু দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। রিমান্ড শেষে কারাগারে নেয়ার পর মৃত্যু হয় ঢাকা মহানগরের এই ছাত্রদল নেতার। তার দল এবং পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
এই যখন অবস্থা তখন কী করবে বিএনপি। এটা ঠিক, বিএনপির সামনে আসলে বেশি কিছু করার পথও খোলা নেই। নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে, দলটি আরো কিছু দিন ধৈর্য ধরবে। পরিস্থিতি যাই হোক কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাবে না। আগামী জুন-জুলাই মাস থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়ার চেষ্টা করবে বিএনপি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রচলিত হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিও তখন দেয়া হতে পারে। কিন্তু এতেও কতটা কাজ দেবে তা নিয়ে সন্দিহান বিএনপি। যদিও রাজনীতিতে কখনো কখনো পরিস্থিতি খুবই দ্রুত বদলায়।
ঢাকার একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আইনি নয়, বরং রাজনৈতিক। রাজনীতির গতিপথই ঠিক করবে শেষ পর্যন্ত তিনি কোথায় থাকবেন।