কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের জেলা প্রধান শাখায় দুঃসাহসিক চুরি হয়েছে। দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে চোরের দল ব্যাংকের ভল্টে ঢুকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা চুরি করেছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল রোববার ব্যাংকে গিয়ে চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন।
শাখাটির নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারার মধ্যেই এই চুরি হলো। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশের আট সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ ও ব্যাংক সূত্র জানায়, শহরের রথখোলায় সোনালী ব্যাংকের জেলা প্রধান শাখা অবস্থিত। সেখানে ট্রেজারি চালানসহ অন্য শাখাগুলোর টাকাও জমা রাখা হয়। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ক্যাশ কর্মকর্তা মোহসিনুল হক ভল্টে ঢুকে মেঝেতে সুড়ঙ্গ দেখেন। তাৎক্ষণিক তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে তাঁরা পুলিশকে জানান। পুলিশ এসে ব্যাংকের পাশে মৃত আমিনুল হকের বাড়ির একজন ভাড়াটের কক্ষে সুড়ঙ্গের অন্য প্রান্তের সন্ধান পায়। পরে গণনা করে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবীর ভূঁঞা।
মৃত আমিনুলের বাড়ির একটি কক্ষে দুই মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকেন মার্জিয়া আক্তার। সোহেল মিয়া পরিচয়ে অন্য এক ব্যক্তি পাশের কক্ষে থাকতেন। তাঁর কক্ষ থেকেই সুড়ঙ্গপথটি তৈরি করা হয়। এ কক্ষ থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে ব্যাংকের ভল্টে ঢুকে টাকা লুট করা হয়। সোহেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মার্জিয়া বলেন, ঘটনার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তাঁর স্বামী সৌদি-প্রবাসী। পাশের কক্ষের ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর কখনো কথাবার্তা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈশা খাঁ সড়কে ব্যাংকের এই শাখায় প্রবেশপথের ডানে একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ও শোরুম রয়েছে। বাঁয়ে ব্যাংকসংলগ্ন একটি গলি। গলির পথটি প্রায় ১০ ফুট চওড়া। ব্যাংকের পেছনে বাড়ি ও সামনে সড়ক। গলির কয়েক গজ দূরে বাঁ পাশে প্রয়াত আমিনুল হকের আধাপাকা বাড়ি।
পুলিশ বলছে, প্রায় ১০০ ফুট সুড়ঙ্গ তৈরি করতে অন্তত এক সপ্তাহ লেগেছে। গত শুক্রবার কিংবা শনিবার রাতের কোনো এক সময়ে চুরি করে সুড়ঙ্গ দিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. শাহানশাহ জানান, ব্যাংকের ভল্টে একাধিক সিন্দুক ও আলমারি রয়েছে। ভল্টে ২৫ কোটি টাকার বেশি গচ্ছিত না রাখার নিয়ম থাকলেও এই শাখার ভল্টে অনেক বেশি টাকা রাখা হয়। সিন্দুক ও আলমারির বাইরে আরও টাকা রাখা ছিল। বাইরের সব টাকাই লুট হয়েছে। সুড়ঙ্গপথে বিদ্যুৎব্যবস্থাসহ কাঠ দিয়ে পিলার তৈরি করা ছিল।
পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই তাঁদের নজরে রয়েছেন।
ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ মো. আমানুল্লাহ জানান, চুরির ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।