শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে কী চান মুশফিকুর রহিম? বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের চাওয়াটাই বা কী?
—জয়।
হ্যাঁ, এক কথায়ই দিয়ে দেওয়া যাচ্ছে উত্তরটা। দুই অধিনায়কের চাওয়াতে যে কোনো পার্থক্য নেই।
কিন্তু মুশফিক সিরিজ জিততে চাইছেন মানে? বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামছে নাকি! না, তা নয়। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাই। প্রতিপক্ষ না বলে ‘প্রবল প্রতিপক্ষ’ বলাই ভালো। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের ইতিহাস কেবলই ‘নির্যাতিত’ হওয়ার। দেশের মাটিতে পেয়েছেন বলেই মুশফিক সেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়ের হুংকার দিয়ে মাঠে নামবেন, বড় বেশি কি কানে লাগছে ব্যাপারটা?
লাগলে লাগুক। মুশফিক আর তাঁর দল এবার মাথা উঁচু করেই মাঠে নামবে। মুশফিকদের সাহস জোগাচ্ছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিস্মরণযোগ্য ইতিহাসেরই শেষ পাতাটি। গত বছরের মার্চে দুই দলের সর্বশেষ সিরিজটি হয়েছিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে। কলম্বোর শেষ টেস্টে হারলেও গল টেস্টে বুক চিতিয়ে ড্র করার স্মৃতি নিজেদের সেরা দিনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও এনে দিচ্ছে সেরা সাফল্য পাওয়ার আত্মবিশ্বাস। কাল সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক বলছিলেন, ‘আমি বরাবরই বলেছি, আমরা প্রতিটি টেস্টই জেতার জন্য খেলি। এই মানসিকতা আমাদের ভেতরে এমনি এমনি তৈরি হয়নি। আমাদের সামর্থ্য আছে বলেই এটা তৈরি হয়েছে।’
বাংলাদেশ অধিনায়কেরই যেখানে জয়ের লক্ষ্য, শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক তো আরও বেশি করে চাইবেন সেটা। কাল দুপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নামার আগে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস সোজাসাপ্টাই বললেন, ‘আমরা সব সময়ই জয়ের জন্য খেলি এবং আমরা সেটাই চাই। ড্রয়ের জন্য আমরা খেলি না, খেলি জয়ের জন্য। ম্যাচ জিততে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
সন্দেহ নেই, বরাবরের মতো এবারও বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় অস্ত্র কুমার সাঙ্গাকারা আর মাহেলা জয়াবর্ধনেই। টেস্ট ক্রিকেটে দুজনেরই ১০ হাজারের বেশি রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে অতীতটাও একই রকম উজ্জ্বল। আরেকটা সিরিজ খেলতে নেমে এই দুই ব্যাটসম্যানকে বাংলাদেশ দলের ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে মুশফিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যত ভালো ব্যাটসম্যানই হোক, সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনেও রক্ত-মাংসেরই মানুষ। তাঁদের আউট করতেও দুটি বলই যথেষ্ট, ‘১০ হাজার রান করা সহজ কথা নয়। তাই বলে এমনও নয় যে, ওরা কখনো ব্যর্থ হয়নি। তাদের নিয়ে কিছু পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
মিরপুরে আজ থেকে শুরু প্রথম টেস্টে তো বটেই, মুশফিকদের পরিকল্পনা কাজে লাগা না-লাগার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে এই সিরিজের। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যতেরও কি নয়? দুই টেস্টের সিরিজে শ্রীলঙ্কা দলকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে ‘বিগ থ্রি’র দ্বিস্তরবিশিষ্ট টেস্টের প্রস্তাবটাকেও একটা জবাব দিতে পারে বাংলাদেশ দল। তাতে বাংলাদেশ শিবিরে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অবচেতনে বেজে চলা অনিশ্চিত আবহ সংগীতের তীব্রতা কিছুটা হলেও কমে আসবে। মুশফিক অবশ্য বলেই দিয়েছেন, মাঠের বাইরের রাজনীতি-কূটনীতির সঙ্গে তিনি মেলাতে রাজি নন মাঠের খেলাকে। ‘বিগ থ্রি’র চক্রান্তও আপাতত ঝেড়ে ফেলতে চান মাথা থেকে। ভাবনায় এখন শুধুই শ্রীলঙ্কা সিরিজ।
সেই ভাবনার সবটুকুই অবশ্য সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো নয়। সংবাদ সম্মেলনে দল নিয়ে প্রশ্ন হওয়াতে যেমন দারুণ এক রসিকতায় বল ছেড়ে দিলেন মুশফিক, ‘দলে যে ১৪ জন দেখেছেন, সবাই খেলার জন্য প্রস্তুত। সত্যি বলতে কি, এঁদের মাঝ থেকেই ১১ জন খেলবে। তিন পেসার খেলতে পারে। শুভ (শামসুর), ইমরুল দুজনই খেলতে পারে। আবার না-ও পারে (হাসি…)।’ মুশফিক সরাসরি না বললেও টিম হোটেলে ভাসা গুঞ্জন বলছে, প্রথম টেস্টে তিন পেসার নিয়ে খেলার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে একাদশের বাইরে থাকবেন মাহমুদউল্লাহ, রাজ্জাক ও ইমরুল। আর দুই পেসার নিয়ে খেললে আল-আমিনকে বাইরে রেখে দলে ঢুকবেন রাজ্জাক।