‘কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব নেই’—এমন দাবি করে গবেষকেরা নিবন্ধ লিখতেই পারেন। আর সেটাকে খামখেয়ালিপূর্ণ বিবেচনা করে বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্বয়ং স্টিফেন হকিং যখন কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে নতুন কোনো ভাবনা নিয়ে আসেন, তখন সেটা নিঃসন্দেহে বাড়তি গুরুত্ব পায়। কারণ, মহাজাগতিক রহস্যময় কৃষ্ণগহ্বরের ধারণার প্রবক্তাদের মধ্যে তিনিও একজন।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ও যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হকিংয়ের সঙ্গে আলাপচারিতার ভিত্তিতে তৈরি একটি নিবন্ধ সম্প্রতি অনলাইনে আলোচনায় এসেছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ধ্রুপদি তত্ত্ব অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বর থেকে কোনো কিছুই বেরিয়ে আসার উপায় নেই। কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী, কিছু শক্তিও বেরিয়ে যেতে পারে।
প্রতিটি কৃষ্ণগহ্বরের চারদিকে যে অদৃশ্য সীমানার কল্পিত আবরণ রয়েছে, তা ‘ইভেন্ট হরাইজন’ নামে পরিচিত। হকিং বলছেন, অদৃশ্য কৃষ্ণগহ্বরের প্রবল আকর্ষণ নয়, বরং একটি তুলনামূলক ‘অনুকূল দিগন্তের’ মাধ্যমে বস্তু ও শক্তি বন্দী হয়ে থাকে। পরে ঘটনাক্রমে সেগুলো বিমুক্ত হয়, তবে অনেকটা পরিবর্তিত বা বিকৃত রূপে। এর সঠিক পদ্ধতিটি এখনো রহস্য হয়ে আছে।
তবে ধারণাটির পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যার জন্য একটি মহাকর্ষীয় শক্তি ও প্রকৃতির অন্যান্য বলের সমন্বয়ে একটি সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন। ফলে গত প্রায় এক শতকব্যাপী তাঁরা যে বিষয়ে ভাবনা এড়িয়ে গেছেন, এখন সেটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই গবেষণা করতে হবে।
নক্ষত্র যখন জ্বালানি পুড়িয়ে শেষ করে ফেলে, তখন তা সংকুচিত হতে থাকে। সাধারণ গ্যালাক্সিগুলোর মাঝে অবস্থানরত বড় বড় নক্ষত্র তাদের বিবর্তনের সর্বশেষ পরিণতিতে ব্ল্যাক হোল বা সৃষ্টি করে। নক্ষত্রগুলো অনেক বেশি সংকুচিত হয়েই ব্ল্যাক হোলের জন্ম দেয়।
কোনো নক্ষত্রের ঘনত্ব ও ভর অনেক বেশি হলে তার মহাকর্ষীয় শক্তি এতটাই শক্তিশালী হবে যে আলো পর্যন্ত সেখান থেকে বের হতে পারবে না। মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যবর্তী আকর্ষণই হচ্ছে মহাকর্ষীয় শক্তি। কৃষ্ণগহ্বর থেকে আলো কিছু দূর যাওয়ার আগেই সেই শক্তি তাকে পেছনে টেনে নেয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই রহস্যময় গহ্বর সম্পর্কে সামান্য হলেও অভাবনীয় কিছু তথ্য পেয়েছেন।
হকিংয়ের ভাবনাবিষয়ক একটি নিবন্ধ মুদ্রিত আকারে প্রকাশের আগে অনলাইনের একটি বিশেষ সার্ভারে রাখা হয়েছে। এটির কথিত শিরোনাম, ‘কৃষ্ণগহ্বরের জন্য তথ্য সংরক্ষণ ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস’। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা বারবারায় অবস্থিত কালফি ইনস্টিটিউট ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের গবেষকদের সঙ্গে স্কাইপির মাধ্যমে হকিংয়ের একটি আলাপচারিতার ভিত্তিতে রচিত ওই নিবন্ধটি এখন অন্য বিজ্ঞানীরা পর্যালোচনা করছেন। নিউ সায়েন্টিস্ট ও নেচার।