অবশেষে আমি ইহা (অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ট্রফি) পাইলাম।’
লি না এমনটা তো বলবেনই। মেলবোর্নে আগের দুটি ফাইনালে হারের স্মৃতি ভুলে কাল নতুন ইতিহাস গড়লেন চীনের মেয়ে। স্লোভাকিয়ার ডমিনিকা সিবুলকোভাকে ৭-৬ (৭/৩), ৬-০ গেমে হারিয়ে প্রথম এশীয় হিসেবে জিতলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন।
লি না তো কাল শুধু সিবুলকোভার বিপক্ষেই খেলেননি। আগের দুটি ফাইনাল হারের তিক্ত স্মৃতির বিপক্ষেও লড়েছেন। এই ম্যাচের মতো আগের দুটি ফাইনালেও (কিম ক্লাইস্টার্স-২০১১ ও ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা-২০১৩) প্রথম সেটে জিতেছিলেন লি না-ই। তবে এবার আর অনভিজ্ঞ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেননি। প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়েই জিতেছেন আরাধ্য শিরোপা। টাইব্রেকারে গড়ানো প্রথম সেটটা শেষ করতে ৭০ মিনিট লাগলেও, দ্বিতীয় সেটটা লি জিতে নিয়েছেন মাত্র ২৭ মিনিটেই।
‘ট্রফিটা কত কাছে’—ফাইনালের আগেই বলছিলেন লি না। সেই ট্রফিটা এবার হাতে তোলার পর কোর্টের মতো কোর্টের বাইরেও সপ্রতিভ লি না। আবেগে বলেই ফেললেন, ‘অবশেষে আমি এটাকে পেয়েছি। আগের দুটি ফাইনালে খুব কাছে গিয়েছিলাম।’
এরপরই আবেগ ছেড়ে বেরিয়ে এল চিরপরিচিত আমুদে এক মেয়ে। সিবুলকোভাকে ধন্যবাদ দেওয়ার পর নিজের সঙ্গী-সাথিদের ধন্যবাদ দিতে গিয়েই হাসির রোল ওঠালেন গ্যালারিতে। প্লেয়ার্স বক্সে বসা এজেন্ট ম্যাক্স আইজেনবাডকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘এজেন্ট ম্যাক্স, তুমি আমাকে খুব ধনী বানিয়ে দিয়েছো। অনেক অনেক ধন্যবাদ।’
এরপর কোচ কার্লোস রদ্রিগেজকে প্রাপ্য ধন্যবাদটা দিয়ে মেতে উঠলেন স্বামী জিয়াং শানকে নিয়ে রসিকতায়, ‘ধন্যবাদ আমার স্বামীকে। সেও চীনে অনেক জনপ্রিয়। ওঁকে ধন্যবাদ সবকিছু ছেড়েছুড়ে আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো জন্য। আমাকে অনুশীলনে সাহায্য তো আছেই, পানীয় বানিয়ে দিয়ে, র্যাকেটের তার মেরামত করে কত কাজই না তুমি করো। তুমি চমৎকার এক লোক, ধন্যবাদ তোমাকে। তুমি কত ভাগ্যবান আমাকে পেয়েছো।’
তিন বছর আগে ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের পর আবার গ্র্যান্ড স্লাম জয়, ৩১ বছর বয়সী লি না পেছনে ফেলে দিয়েছেন মার্গারেট কোর্টকে। লির আগে উন্মুক্ত যুগে সবচেয়ে বেশি বয়সে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন এই অস্ট্রেলীয় গ্রেটই। উন্মুক্ত যুগে বয়স ৩০ পেরিয়ে যাওয়ার পর গ্র্যান্ড স্লাম জেতা সপ্তম নারী খেলোয়াড় লি বয়সকে কোনো বাধাই মনে করছেন না, ‘আমি বলব বয়স-টয়স কিছুই না। এখনো আমি গ্র্যান্ড স্লাম জিততে পারি। তাই আমি আমার বয়স নিয়ে বেশ খুশি। কোর্টে অভিজ্ঞতা নিয়েই আমি নামতে পারি।’
এই জয়ে র্যাঙ্কিংয়েও এক ধাপ ওপরে উঠে তিনে আসছেন লি না। দুইয়ে থাকা আজারেঙ্কার সঙ্গে লিনার দূরত্ব ১১ পয়েন্ট। শীর্ষে সেরেনা উইলিয়ামসই।
হারলেও অতটা মন খারাপ ছিল না ‘পকেট রকেট’ সিবুলকোভার। ফাইনালে ওঠার পথে মারিয়া শারাপোভা ও আগ্নিয়েস্কা রাদভানস্কাকে হারিয়ে এরই মধ্যে অনেক গুণগ্রাহী পেয়ে গেছেন স্লোভাক মেয়ে। খুশি তা নিয়েই, ‘এটা ছিল আমার প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল। এটাকে যেভাবে সামলালাম, আমি খুশি। আমি চেয়েছিলাম নিজের সেরা খেলাটাই খেলতে। কিন্তু সে (লি না) এতই ভালোই খেলল যে, কাজটা সহজ ছিল না।’ এএফপি।