যিনি রাঁধেন তিনি চুলও বাঁধেন। কিন্তু একজন সুন্দরী প্রযুক্তিবিদ ও সুপার মডেল নিজের ক্ষেত্রে কোন পরিচয়টা দেবেন? তিনি যে র্যাম্পেও হাঁটেন আবার কোডও লেখেন! যুক্তরাষ্ট্রের লিন্ডসে স্কটের এমনই এক পরিচয় সংকট সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একে তো তিনি সুন্দরী ফ্যাশন মডেল, তায় আবার প্রযুক্তিবিদও। লোকে যা বলে বলুক, চলুন বিষয়টি নিয়ে স্কটের মুখেই শোনা যাক। সুপার মডেল ও কোডার স্কটকে নিয়ে সম্প্রতি সিএনএন একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।
‘সফটওয়্যার প্রকৌশলী’ বলতে কি শুধু গোমড়ামুখের সারা দিন কম্পিউটার নিয়ে কাজ করা কিংবা সামাজিক যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন কোনো তরুণকেই ভাবতে হবে? আবার সুন্দরী ফ্যাশন মডেলকে কেবল বুদ্ধিহীন দেহ-সৌষ্ঠবের অধিকারীই মনে করতে হবে? অনেক ক্ষেত্রেই সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও সুপার মডেলদের এ রকমই মনে করা হয়। কিন্তু সুন্দরী লিন্ডসে স্কট এবার সেই বাঁধাধরা ধারণাকে ভেঙে দিয়েছেন।ফ্যাশন হাউস প্রাডা আর ভিক্টোরিয়াস সিক্রেটের সুপার মডেল লিন্ডসে স্কট তাঁর অবসর সময় কাটান মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে। ২৯ বছর বয়সী লিন্ডসে মার্কিন ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘হার্পার বাজার’, যুক্তরাজ্যের ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনেও মডেল হয়েছেন। কিন্তু তিনি তাঁর অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে দক্ষতা নিয়েই গর্ব করেন। অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে তাঁর তৈরি কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন অনুমোদন পেয়েছে। লিন্ডসে স্কট জানিয়েছেন, ‘একজন ফ্যাশন মডেল হিসেবে কোনো কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্তু একজন অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতা হিসেবে আমার তৈরি লিন্ডসে স্কটঅ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাধ্যমে আমি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি।’ আইওএস প্ল্যাটফর্মে স্কটের তৈরি দুটি অ্যাপ্লিকেশন বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে। শিগগিরই একটি সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ উন্মুক্ত করবেন তিনি। তাঁর তৈরি অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে রয়েছে ‘এডুকেট!’ ও ‘আইপোর্ট’। এডুকেট অ্যাপ্লিকেশনটি উগান্ডার শিক্ষার্থীর কল্যাণে একটি দাতব্য বিষয়-সংশ্লিষ্ট আর আইপোর্ট হচ্ছে মডেল বা তারকাদের প্রোফাইল সংরক্ষণের জন্য অ্যাপ। স্কট জানিয়েছেন, ‘যদি স্মার্টনেস আর ভালো প্রোগ্রামারের মধ্যে আমাকে একটি হতে বলা হয়, তবে আমি প্রযুক্তির বিষয়টিই বেছে নেব।’ কোথা থেকে এসব শিখেছেন লিন্ডসে স্কট? কোড লেখার এ বিদ্যা নিজে থেকেই রপ্ত করেছেন সুন্দরী এই সুপার মডেল। মাধ্যমিকে পড়ার সময় তিনি সফটওয়্যার ডকুমেন্টেশন শেখেন এবং তাঁর টিআই-৮৯ ক্যালকুলেটরে প্রোগ্রামিংয়ের বিষয়টিও শেখেন। নিউ জার্সির একজন তরুণী হিসেবে তিনি ক্যালকুলেটরে গেম খেলতে পছন্দ করতেন। তাঁর ভাষ্য, তিনি প্রথমে জানতেনই না যে এগুলো কোনো কাজে লাগবে বা এগুলো কোডিং জাতীয় কিছু। তিনি স্রেফ মজা করার জন্য এগুলো শিখেছিলেন। স্কট আরও জানিয়েছেন, স্কুলে তিনি মোটেও ভালো শিক্ষার্থী ছিলেন না। সব সময় পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতেন। আমহার্টস কলেজ থেকে জাভা ল্যাংগুয়েজ, সি++ ও এমআইপিএস শেখেন। কম্পিউটার ও থিয়েটার মেজর হিসেবে নিয়েছিলেন পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি উচ্চতার এই সুন্দরী মডেল। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার বদলে মডেলিংকেই বেছে নেন তিনি। ২০০৯ সালে আফ্রিকান-আমেরিকান এই নারী মডেল কেলভিন ক্লেইনের হয়ে নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে প্রথম সুযোগ পান। স্কটের ভাষ্য, ‘যখন মডেলিংয়ের সুযোগ এল, তখন মোটেও মডেল হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা ছিল না। আমার মডেলিংয়ে আকাঙ্ক্ষা থাকলেও আমার কাছে হঠাত্ই যেন সুযোগ হয়ে গিয়েছিল। এরপর একে একে বড় বড় ফ্যাশন হাউসের কাছ থেকে ডাক আসতেই থাকল।’ তবে মডেলিং নিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও প্রোগ্রামিং একেবারেই ছেড়ে দেননি তিনি। এ সময় তিনি নিজে নিজে পাইথন, অবজেকটিভ-সির মতো প্রোগ্রামিং-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো শিখেছিলেন। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন নিয়েও কাজ করছেন তিনি। লিন্ডসে স্কট জানান, ‘আমি মডেলিং নিয়েও অনেক ভেবেছি। কিন্তু অনেক মডেলের মধ্যেও যখন আমি কোলে ল্যাপটপ নিয়ে কোড লিখতে থাকি, তখন অন্যদের চেয়ে একটু আলাদাই হয়ে পড়ি। মডেলিংয়ের ক্ষেত্রগুলোতে আমি কখনো আমার এই কোডিংয়ের দক্ষতার বিষয়টিকে জড়াই না। আমি দুটি বিষয়কে আলাদা রাখি।’ লিন্ডসের ভাই ম্যাথু তাঁর বিশাল ভক্ত। ম্যাথু মনে করেন, তাঁর বোন মাইক্রোসফট সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস আর ব্রাজিলের সুপার মডেল গিজেলের মিশ্রণ। তাঁর মতে, লিন্ডসে মডেলিং আর কোডিংয়ের প্রতি লিন্ডসের এই আগ্রহ বিশ্বকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
সম্প্রতি নিউ জার্সির একটি স্কুলে গিয়ে সেখানকার শিক্ষার্থীদের কোডিং বিষয়ে উত্সাহ দিয়ে এসেছেন লিন্ডসে। লিন্ডসে বলেছেন, ‘আমরা ভাবি যে প্রযুক্তিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হয়। এ ধরনের ধারণা ঠিক নয়। আমাদের ধারণার কারণেই এখন পর্যন্ত নারী আর সংখ্যালঘু কোডার কম দেখা যায়।’
লিন্ডসে স্কটের ওয়েবসাইটের ঠিকানা http://www.lyndseyscott.com/