‘চেষ্টা করেছ। ব্যর্থ হয়েছ। কোনো ব্যাপার না।
আবার চেষ্টা করো। আবার ব্যর্থ হও। এবার আরেকটু ভালোভাবে।’
স্তানিসলাস ভাভরিঙ্কার বাঁ হাতে খোদিত স্যামুয়েল বেকেটের এই বিখ্যাত পঙিক্ত। শুধু ট্যাটু এঁকেই নয়, রজার ফেদেরারের স্বদেশি নিরন্তর অনুপ্রেরণা হিসেবেই নিয়েছেন এটিকে। টুর্নামেন্টের পর টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা, তবু মনোবল ভাঙেনি ভাভরিঙ্কার। লক্ষ্যে স্থির থেকে শেষ পর্যন্ত সফল এই সুইস। রড লেভার অ্যারেনায় কাল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে রাফায়েল নাদালকে হারিয়েছেন ৬-৩, ৬-২, ৩-৬, ৬-৩ গেমে। ভাভরিঙ্কার অপেক্ষার অবসান। হাতে তুললেন প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা!
নাদালের বিপক্ষে এর আগে ১২ ম্যাচ খেলে সব কটিই হেরেছিলেন। কোনো ম্যাচে একটি সেটও জিততে পারেননি। সেই ভাভরিঙ্কা জিতলেন ১৩ নম্বর ম্যাচে এসে। প্রতিপক্ষ এই নাদাল অবশ্য সেরা ফর্মের নাদাল নন। চোটের সঙ্গে লড়াই করা এক নাদাল।
প্রথম দুই সেটে একরকম আত্মসমর্পণের পর মনে হচ্ছিল সরাসরি সেটেই হেরে যাচ্ছেন নাদাল। কিন্তু তৃতীয় সেটটা ঠিকই জিতে নিলেন অদম্য এই স্প্যানিয়ার্ড। এরপর অবশ্য চতুর্থ সেটে আর পেরে ওঠেননি, ভাভরিঙ্কার দেয়ালে আটকেই গেলেন এই লড়াইয়ে।
দ্বিতীয় সেট চলাকালে মেডিকেল টাইমআউট নিতে বাধ্য হয়েছিলেন নাদাল। মেজাজ হারিয়ে এ সময় চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন ভাভরিঙ্কা। ম্যাচের পর সেই ভাভরিঙ্কা শান্ত। নাদালের অবস্থা বুঝেই কিনা জয়ের পর উচ্ছ্বাসে না ভেসে পা রাখলেন মাটিতেই। শূন্যে হাত উঁচিয়ে উদ্যাপন করেই সান্ত্বনা দিতে ছুটে গেলেন নাদালের দিকে। পুরস্কার নিতে এসেও নাদালের স্তুতি গাইলেন ২৮ বছর বয়সী তারকা, ‘রাফা, প্রথমেই বলে নিই তোমার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। আশা করছি, তোমার পিঠ ঠিক আছে। তুমি খুব ভালো বন্ধু ও গ্রেট চ্যাম্পিয়ন। গত বছর তুমি প্রত্যাবর্তনের অসাধারণ এক গল্প লিখেছ।’
এরপর মনের ভেতর চেপে থাকা আবেগ বেরিয়ে এল। ৩৬ বারের চেষ্টায় প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জেতা—আবেগ তো ভাসিয়ে নেবেই ভাভরিঙ্কাকে, ‘আমার জন্য এটাই সেরা গ্র্যান্ড স্লাম। এখানে খেলাটা আমি দারুণ উপভোগ করছি।’ বলতে বলতে ফিরে তাকালেন পেছনে। গত বছর এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেরই চতুর্থ রাউন্ডে নোভাক জোকোভিচের কাছে পাঁচ সেটে হারের কষ্ট ভুলে গাইলেন দিনবদলের গান, ‘গতবার হারের পর অনেক কেঁদেছি। গত এক বছরে অনেক কিছুই হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঠিক জানি না, আমি স্বপ্ন দেখছি কি না। কাল সকালেই হয়তো বোঝা যাবে।’
ভাভরিঙ্কার দিনে নাদাল কেঁদেই ফেললেন ট্রফি নিতে এসে। ফোস্কা পড়া বাঁ হাত দিয়ে খেলেই ফাইনালে ওঠা ১৩টি গ্র্যান্ড স্লামের মালিক ভাভরিঙ্কাকে ধন্যবাদ দিলেন প্রথমে। তারপর দর্শকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন তাদের হতাশ করার জন্য, ‘সব দর্শককে বলছি, খুব আবেগের দুটি সপ্তাহ কাটালাম। শেষটা যেভাবে হলো আমি দুঃখিত। আমি চেষ্টা করেছি, খুব…খুব চেষ্টা করেছি।
এ হারে রড লেভার ও রয় এমারসনের সঙ্গে এক সারিতে বসার সুযোগ হারালেন নাদাল। সবগুলো গ্র্যান্ড স্লাম দুবার করে জেতা হলো না—নাদালের অপেক্ষা বাড়লই। এএফপি, রয়টার্স।
২১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে শীর্ষ দুই বাছাইকে হারালেন কেউ। ভাভরিঙ্কার আগে এই কৃতিত্ব ছিল সার্গি ব্রুগুয়েরার (১৯৯৩, ফ্রেঞ্চ ওপেন)।
৩৬ তম গ্র্যান্ড স্লামে এসে শিরোপার দেখা পেলেন ভাভরিঙ্কা। ক্যারিয়ারে প্রথম শিরোপা জিততে শুধু গোরান ইভানিসেভিচকে খেলতে হয়েছে এর চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম (৪৮টি)।