শীতের বৈরী আবহাওয়া ত্বকের জন্য বয়ে আনে নানান ধরনের সমস্যা। পাশাপাশি অনেক সময় ত্বকে হতে পারে বিভিন্ন রোগও। কিছু চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এই সময়।
শীতে ত্বকের রোগবালাই নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বখতিয়ার কামাল। তিনি বলেন, ‘শীতকালে ত্বকের কিছু রোগ দেকা দিতে পারে, যেমন—স্ক্যাবিস, ইমপেটিগো, জেরিয়াট্রিক ডার্মাটোসিস। তা ছাড়া চুলকানিজনিত সমস্যাগুলোও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে শীতে।’
এ রোগগুলো হলে যে ধরনের উপসর্গ দেখা যেতে পারে তা হলো—
 শুষ্ক লালচে ত্বকে চুলকানি
 ত্বক অস্বাভাবিকভাবে ফেটে যাওয়া
 রোদে পোড়া ভাব
 ত্বকে অস্বাভাবিক ভাঁজ পড়া
এসব সমস্যা প্রতিরোধে তাঁর পরামর্শ হলো—
 প্রচুর পানি, শাকসবজি ও সুষম খাবার খাবেন।
 হালকা গরম পানিতে গোসল করবেন।
 অল্প পানিতে ও অল্প সময়ে গোসল করবেন।
 অতিরিক্ত সাবান বা ক্লেনজার ব্যবহার করবেন না।
 গোসলের পর ও রাতে শোবার সময় ত্বকে অলিভ অয়েল, গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাবেন।
 নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সরিষার তেল ব্যবহার না করাই ভালো।
 ঘর হালকা গরম রাখুন। প্রয়োজনে রুম হিটার অথবা হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।
 ত্বকের সমস্যা খুব বেশি মনে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শীতে ত্বকের বিভিন্ন রোগবালাই নিয়ে কথা বলেছেন রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল। জেনে নিন তার কিছু পরামর্শ—
 শীতের আলস্যে গোসল করা থেকে বিরত থাকবেন না, কারণ তাতে লোমকূপে ময়লা জমে ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ হতে পারে এবং হতে পারে বিভিন্ন অসুখও।
 নিয়মিত চুল এবং চুলের গোড়া পরিষ্কার করুন। চুল আঁচড়াতেও অলসতা করবেন না কখনোই।
 শীতের রোদে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। বাইরে বেরোলে ছাতা ব্যবহার করুন। ব্যবহার করতে পারেন সান প্রোটেকশন ক্রিম বা লোশনও।
 ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি মাসে অন্তত এক-দুবার ভালো কোন বিউটি পারলারে গিয়ে অভিজ্ঞ রূপবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী যত্নের কিছু উপায় জানিয়েছেন ফারজানা শাকিল।

তৈলাক্ত ত্বক
যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁরা ত্বকে তেল বাড়াবেন, যেমন—বাদাম বা দুধের সর এমন কিছু ব্যবহার করবেন না। এক টেবিল চামচ মসুরের ডাল বাটা ও এক টেবিল চামচ কাঁচা দুধ বা সর ছাড়া দুধের সঙ্গে আধা টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ ফলের রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগাতে পারেন। বেছে নিতে পারেন সাইট্রিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ ফল (টক ফল), যেমন—কাগজিলেবু, বাতাবিলেবু, কমলালেবু ইত্যাদি। আবার ব্যবহার করতে পারেন পাকা পেঁপে, যা মুখের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। তারপর হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন।

শুষ্ক ত্বক
তৈলাক্ত ত্বকের প্যাকটিই একটু পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারেন। মসুর ডাল বাটার সঙ্গে মধু নিন এক টেবিল চামচ। আর ফলের রস নিতে হবে আধা টেবিল চামচ। সঙ্গে যোগ করুন একটু দুধের সর আর চারটি আমন্ড বাদাম বাটা। প্যাকটি তুলে ফেলার পর কোল্ড ক্রিম বা বেশি ময়েশ্চারযুক্ত কোনো ক্রিম লাগাবেন।

স্বাভাবিক ত্বক
স্বাভাবিক ত্বকের জন্য এই প্যাকে লেবুর রস বাদ দিতে হবে আর মধুর পরিমাণ হবে এক টেবিল চামচ।
এ ব্যাপারে আরও কথা বলেছেন রূপবিষয়ক পরামর্শদাতা তানজিমা শারমিন। তিনি বলেন, ‘শীতকালে ধুলাবালির কারণে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা এড়াতে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিতে হবে।’
তানজিমা শারমিন দিয়েছেন আরও কিছু পরামর্শ—
 শীতের সময় নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। সবার ত্বক এক রকম নয়। তাই যার যার ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
 গ্লিসারিনের সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়েও ত্বকে লাগাতে পারেন।
 যেকোনো ময়েশ্চারাইজার লাগানোর আগে ত্বক অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
 অপরিষ্কার ঠোঁটে লিপবাম বা লিপগ্লস লাগাবেন না।