প্রশ্নটা করতেই মাইকেল সয়সার দিকে মাইক্রোফোন ঘুরিয়ে দিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর তো অধিনায়কের চেয়ে ম্যানেজারেরই ভালো দেওয়ার কথা।
সয়সা দিলেনও খুব ভালো উত্তর, অন্তত বাংলাদেশের জন্য ভালো তো বটেই। ‘এখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা অসাধারণ। আমাদের দলের নিরাপত্তার জন্য তারা (বিসিবি) সম্ভাব্য সব ব্যবস্থাই নিয়েছে। আমরা এসব ব্যবস্থায় খুবই সন্তুষ্ট’—সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন শ্রীলঙ্কা দলের ম্যানেজার।
বাংলাদেশ সফরে তাহলে আপাতত কোনো ভয়-টয় নেই পরশু ঢাকার মাটিতে পা রাখা লংকানদের! ভয় একেবারেই যে পাচ্ছে না, তা অবশ্য নয়। অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের কথা ধরলে তাদের ভয়টা বাংলাদেশ দলকে নিয়েই।
শ্রীলঙ্কার সামনে যে মুশফিকুর রহিমরা আগের সেই ভয় কাতুরে ছোট্ট শিশুটি নয়, সেটি দেখা গেছে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরের গল টেস্টেই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনে কাল সেই স্মৃতি মনে করে ম্যাথুস বললেন, ‘গত কয়েক বছরে অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ দল এবং আমরাও তাদের হালকাভাবে নিচ্ছি না। আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে বাংলাদেশের কাছ থেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করছি। ইতিবাচক খেলে জেতারই চেষ্টা করব আমরা।’
গত বছর শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে করা ড্র আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ দলের। এবার তো খেলা নিজেদের মাঠে। ম্যাথুস মাথায় রাখছেন সেটিও, ‘খেলা এবার তাদের (বাংলাদেশ) মাটিতে এবং আমরা জানি, নিজেদের মাঠে বাংলাদেশকে হারানো অনেক কঠিন। সিরিজ জিততে আমাদের ভালো ক্রিকেটই খেলতে হবে। বাংলাদেশ দলে বেশ কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় আছে। তাদের বিপক্ষে আমাদের শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে।’
এই ‘তারা’ কারা সেটা আলাদাভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল শ্রীলঙ্কান অধিনায়কের কাছে। কিন্তু ম্যাথুস প্রশ্নটার সরাসরি উত্তর দিলেন না, ‘আমরা নির্দিষ্ট এক-দুজনকে নিয়ে ভাবছি না। ব্যাটিংয়ের কথা যদি ধরেন, তাদের ছয়-সাতজন ভালো ব্যাটসম্যান আছে। সবার দিকেই আমাদের দৃষ্টি আছে; কারণ তাঁদের মধ্যে যে কেউ ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে।’ একই কথা বললেন বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণ নিয়েও, ‘বাংলাদেশ দলে ভালো বোলারও আছে বেশ কয়েকজন। দলের বোলিং আক্রমণও বেশ ভালো। এটা নিয়েও আমরা ভেবেচিন্তে কৌশল ঠিক করব।’
শ্রীলঙ্কা দলে আছেন কুমার সাঙ্গাকারা-মাহেলা জয়াবর্ধনের মতো অভিজ্ঞ সেনানি। কৌশল সিলভা, দিমুথ করুনারত্নের মতো অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞরাও এই দলের সঙ্গী। সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১-১-এ টেস্ট সিরিজ ড্র করে আসার পর অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে গড়া এই দল নিয়ে আরও অনেক দূর যেতে চান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, ‘দলে কৌশল সিলভা আছে, আগেও সে কয়েকটা টেস্ট খেলেছে। পাকিস্তান সিরিজে দলের হয়ে বেশি রান করাদের মধ্যে সে একজন। দিমুথ করুনারত্নের কথাও বলতে হয়, ওপেনিংয়ে কৌশলের সঙ্গে ভালো জুটি হয়েছে ওর। সঙ্গে সাঙ্গাকারা-মাহেলা তো আছেই। দল হিসেবে আমরা খুব ভালো খেলছি এবং ভবিষ্যতেও তেমনই খেলতে চাই।’
বাংলাদেশের উইকেটে বোলিং আক্রমণে মূল ভরসা হওয়ার কথা স্পিনারদেরই। শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক সেটি ভেবেই কিনা রঙ্গনা হেরাথের কথা আলাদা করে বললেন। তবে তাঁর কথায় পরিষ্কার, শুধু স্পিনারদের দিকে তাকিয়ে নেই লংকানরা, ‘আমরা শুধু স্পিনারদের ওপর নির্ভর করছি না। আমাদের কিছু ভালো ফাস্ট বোলারও আছে। দুবাইয়ের ন্যাড়া উইকেটেও দারুণ বল করেছে ওরা।’
ম্যাথুসের ভান্ডারে স্পিন-ফাস্ট সব অস্ত্র থাকলেও মুশফিকুর রহিমকে স্পিনারদের ওপরই নির্ভর করতে হবে বেশি। শ্রীলঙ্কান অধিনায়কও তা জানেন। তবে বাংলাদেশি স্পিনারদের খেলার ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হলো ম্যাথুসকে, ‘বাংলাদেশের ভালো ভালো স্পিনার আছে। তবে অতীতে তাদের খুব ভালোভাবে সামলেছি আমরা।’